Announcements জনগণ ও ভাষা

অভিন্ন ইতিহাস ও সভ্যতার ভিত্তিতে ভারত ও বাংলাদেশ একই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য লালন করে। বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস হচ্ছে জীবনের বিভিন্ন দিকেরএকটিসামঞ্জস্যময় সম্মিলনের প্রকাশ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বস্তুগত উপাদান এবং মেধাগত বৈশিষ্ট্য বাংলাকে তার অসাধারণ পরিচিতি প্রদান করেছে।শিল্পকলার সকলক্ষেত্রে অর্জনসমূহ যা সময়ের সকল নেতিবাচক উপাদানকে উপেক্ষা করে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে তাকেই বাংলার সাংস্কৃতিকঐতিহ্য হিসেবে অভিহিত করা যেতেপারে এবং এই ঐতিহ্য বিপুলভাবে তার সমৃদ্ধ ভাষা, শিল্পকলা, রন্ধনশৈলী, চলচ্চিত্র এবং বিস্ময়কর স্থাপত্যশিল্পের মধ্যেদিয়ে ফুটে উঠেছে। সাংস্কৃতিকভাবে উর্বর এবংধীশক্তিতে ভরপুর এই অঞ্চল জ্ঞানতাপস ও কীর্তিমান মানুষের জন্ম দিয়েছে। সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যেবাংলার মাটিতে বিশেষ কিছু রয়েছে কেননা এই উপমহাদেশেরনোবেল বিজয়ীগণ সকলেই বাংলার মানুষ- হয় তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ড. অমর্ত্য সেন কিংবাড. মুহম্মদ ইউনুস। বাংলা মাদার তেরেসার কৃতিত্বেরও বৈধ দাবীদার কেননাতিনি তাঁর জীবনের প্রায় পুরোটাই কোলকাতায় কাটিয়েছেন এবং ড. সি.ভি. রমন-এরও যিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিদ্যার অগ্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন। 

যদিও অনেক বাঙালি বিশ্ব ব্যাপী সমাদৃত ও পুরস্কৃত হয়েছেন কিন্তু এমনও অনেক আছেন যারা  তাঁদের মৌলিক এবং যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক কাজ সত্ত্বেও কোন খ্যাতি পাননি । সবচেয়ে বিস্ময়কর উদাহরণ হলেন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, যিনি ১৮৫৮ সালে ঢাকার  নিকটবর্তী বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বেতার আবিষ্কার এবং গাছেরও যে প্রাণ ও অনুভূতি আছে , এগুলো ছাড়াও উল্লেখযোগ্য অনেক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেন। অসংখ্য প্রখ্যাত ভারতীয় আছেন যাদের শেকড় অবিভক্ত বাংলায় যা গুণে শেষ করা যাবে না । পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু জন্মসূত্রে নারায়ানগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এর নিকটবর্তী বারদি গ্রামে এবং অন্যদিকে বিখ্যাত বাঙালি কবি সুকান্ত  ভট্টাচার্য  এর ভাগ্নে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এর পরিবারও ফরিদপুরের কোটালিপাড়ার । এটা সবাই জানে যে অনেক বাঙালি প্রতিভা ভারতীয় চলচিত্র জগতকে সমৃদ্ধ করেছে । খুব কম লোকই জানে যে অনেক খ্যাতিমান ভারতীয় চলচিত্র অভিনেতা অতীতের পূর্ব বাংলার । চলচিত্র অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন জন্মগ্রহণ করেন এবং ছেলেবেলা কাটিয়েছেন পাবনায়, মিঠুন চক্রবর্তী জন্মগ্রহণ করেন বরিশালে এবং বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক সচীন দেববর্মণ হলেন কুমিল্লার এবং অন্যদিকে বাপ্পি লাহিড়ী এসেছেন সিরাজগঞ্জ থেকে ।

২০১৩ সালে হিগস বসন কণার অস্তিত্তের ধারণা প্রদানের জন্য পিটার হিগস এর নোবেল বিজয় এরসাথে সঙ্গে বাংলার একজন প্রথিতযশা  সন্তান সত্যেন্দ্রনাথ বোস এর কাজও স্মরণ না করে পারা যায় না । ২০১৩ সালের মার্চে জেনেভায় ইউরোপিয়ান নিউক্লিয়ার রিসার্স সেন্টার (সিইআরএন)- এ গবেষণার মাধ্যমে হিগস বসন কণার অস্তিত্ব পরিক্ষামূলকভাবে প্রমাণিত হয়।  বোস-আইনস্টাইন এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী  মৌলগুলোর শ্রেণী যার নাম বসন, এর নামকরণ করা হয়েছে তার নামানুসারে  এবং এটি করেন আর কেউ নন স্বয়ং নোবেল বিজয়ী পল ডিরেক। বোসের এই কাজটি প্যাঙ্ক, বোর ও আইন এর পূর্বতন কোয়ান্টাম সূত্র এবং স্ক্রডিনজার, হাইজেনবার্গ , বর্ন, ডিরেক ও আরও অন্যান্যদের নতুন কোয়ান্টাম তত্তের অন্তরবর্তী পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত । ১৯২১ সালে বোস সদ্য প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তিনি ১৯২৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের পাঠক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় পদার্থের চিরায়ত কোন নিয়মের উল্লেখ না করে নির্দিষ্ট কিছু মৌল নিয়ে গণনার সম্পূর্ণ নতুন পথ অনুসরণ করে প্যাঙ্ক এর কোয়ান্টাম বিকিরণ তত্তের উপর ভিত্তি করে একটি গবেষণা রিপোর্ট তৈরী করেন। তার এই রিপোর্টটি কোয়ান্টাম পরিসংখ্যানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে এবং এখন এটি বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান নামে সুপরিচিত ।

****