শ্রীমতী ঝর্ণা ধারা চৌধুরীর স্মরণে ভারতীয় হাই কমিশনার শ্রীমতী রীভা গাঙ্গুলি দাশের বক্তব্য বিবৃতি ও বক্তৃতা

শ্রীমতী ঝর্ণা ধারা চৌধুরীর স্মরণে ভারতীয় হাই কমিশনার শ্রীমতী রীভা গাঙ্গুলি দাশের বক্তব্য

ভারতীয় হাই কমিশন

ঢাকা

শ্রীমতী ঝর্ণা ধারা চৌধুরীর স্মরণে ভারতীয় হাই কমিশনার শ্রীমতী রীভা গাঙ্গুলি দাশের বক্তব্য

[১২ই জুলাই ২০১৯]

মাননীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী জনাব আা. ক. ম. মোজাম্মেল হক

জনাব এইচ এম ইব্রাহিম, সাংসদ, নোয়াখালী-১

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান খান, সাবেক উপাচার্য, বিএসএমএমইউ

ড. জামাল উদ্দীন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ

শ্রী স্বদেশ রায়, সভাপতি, গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট

শ্রী নব কুমার রাহা, পরিচালক, গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট, নোয়াখালী

শ্রী তন্ময় দাস, ডেপুটি কমিশনার, নোয়াখালী

মো. আলমগীর হোসেন, পুলিশ সুপার, নোয়াখালী

জনাব মুনতাসীর মামুন

 ১. আজ আমি অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কথা বলছি। আপনাদের অনেকেই জানেন যে, এর আগে আমি কর্মসূত্রে বাংলাদেশে ছিলাম এবং ঝর্ণা দির সাথে তখন থেকেই আমার পরিচয় ছিল। এই স্মৃতি আমার কাছে অনেক সম্মানের যে ঝর্ণা দি’কে শুধু কাছে থেকে জানারই সুযোগ ঘটেনি বরঞ্চ তাঁর ভালোবাসা ও স্নেহলাভের সুযোগ হয়েছিল। যদিও, আমরা একজন মহিয়সী নারীকে হারালাম, ঝর্ণাদির চলে যাওয়া আমার জন্য ব্যক্তিগত ক্ষতি। এটা আমার দুর্ভাগ্য যে, গত মাসে ঢাকার একটি হাসপাতালে দিদির সাথে সাক্ষাতে, তিনি আমাকে চেনার অবস্থায় ছিলেন না। তবে, ঝর্ণাদির সাথে কাটানো সুন্দর সময়গুলোই আমার সান্ত্বনা।

 ২. আমার অথবা কারো পক্ষে, ঝর্ণা দির অবদান হিসেব করা সম্ভব নয়। বিশেষত, আজকের এই স্বার্থপর বিশ্বে, ঝর্ণা দির জীবন ছিল অন্যের জন্য নিবেদিত। শৈশবে দেখা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার স্মৃতি, উনাকে মহাত্মা গান্ধীর আদর্শের পথে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। সেই থেকে ঝর্ণাদি বিশ্বের কল্যাণে তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আমি জানি না, ১৭ বছর বয়সে স্কুল শুরু করা কিংবা সপ্তাহে দু’বার উপোস করে শিশুদের জন্য বই ও অর্থ সংগ্রহের মতো নি:স্বার্থ মানসিকতা আমাদের ক’জনের মধ্যে আছে।

 ৩. সমাজসেবা বা এনজিওগুলি জনপ্রিয় হওয়ার আগে, ১৯৯০ সালে গান্ধী আশ্রমের পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর ঝর্ণাদি কুটির শিল্প, গ্রামীণ উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচি, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন, যার ফলে অসংখ্য মানুষ উপকৃত হন। এছাড়াও তাঁর মৎস্য চাষ, ধোঁয়াহীন চুলা নির্মাণ, বনায়ন ও স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্প প্রমাণ করেছে যে, ঝর্ণাদি তাঁর সময়ের চেয়েও অনেক এগিয়ে ছিলেন। তিনি কুমিল্লা জেলার অভয়াশ্রম এবং ফেনী জেলার খাদি প্রকল্প পুনরায় চালূ করার উদ্যোগ নেন, যা পাকিস্তান শাসনামলে ভোগান্তির আগে গান্ধী মতাদর্শের প্রচারে গৌরবময় অতীতের সাক্ষ্য বহন করে। কখনও মহাত্মার সান্নিধ্যে না এসেও একজন মানুষ তাঁর কতটা কাছাকাছি পৌঁছুতে পারেন ঝর্ণা ধারা চৌধুরী তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

 ৪. আমরা, ভারত সরকার এবং ভারতীয় হাই কমিশন ঝর্ণা দি এবং গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের প্রচেষ্টায় অংশীদার হওয়ার বিশেষ সুযোগ পেয়েছি। আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করার চেষ্টা করেছি এবং আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তাঁর আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ, ২০১৩ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। এছাড়াও তিনি ২০১৫ সালে একুশে পদক ও ১৯৯৮ সালে জামনালাল বাজাজ আন্তর্জাতিক পুরস্কারসহ গান্ধী মতাদর্শ প্রচারের জন্য অনেক সম্মাননা লাভ করেছেন ।

৫.    ঝর্ণাদির বিশাল অবদানকে স্মরণ করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এস জয়শঙ্কর একটি শোকবার্তা প্রেরণ করেছেন, যা আমি এখন পড়বো-

“২৭ জুন ২০১৯, ঢাকায় বিশিষ্ট গান্ধীবাদী শ্রীমতী ঝর্ণা ধারা চৌধুরীর মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। আমরা শান্তি, সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং ভারত ও বাংলাদেশের বন্ধুত্বের প্রতি তার অবদান স্মরণ করি। মানবতার সেবায় তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আমি শ্রীমতী ঝর্ণা ধারা চৌধুরীর বন্ধু ও গুণগ্রাহীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন নোয়াখালী গান্ধী আশ্রমের সদস্যদের এই অপূরণীয় ক্ষতি সহ্য করার শক্তি দেন। আজকের বিশ্বে গান্ধীজির মূল্যবোধকে ছড়িয়ে দিতে তাঁর কাজ আমাদের অনুপ্রাণিত করুক।”

৬. ঝর্ণাদির এই বিয়োগে ভালবাসা ও দয়ার শূন্যতা তৈরি হলেও তাঁর আদর্শ আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই বাণীগুলির মধ্যে তাঁর আলোকিত জীবনের প্রতিফলন ঘটে-

             আমার মুক্তি সর্বজনের মনের মাঝে,

          দুঃখবিপদ-তুচ্ছ-করা কঠিন কাজে।

বিশ্বধাতার যজ্ঞশালা আত্মহোমের বহ্নি জ্বালা

          জীবন যেন দিই আহুতি মুক্তি-আশে।

 ঝর্ণাদির মতো মহান প্রাণের কখনোই প্রয়াণ হয় না, তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর কাজের মাধ্যমে।

 ধন্যবাদ।

****