ত্রিপুরার কমলপুর (ভারত)-কুরমাঘাট (বাংলাদেশ) সীমান্ত  হাটের  ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাই কমিশনার শ্রী বিক্রম দোরাইস্বামীর বক্তব্য
 [০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২] [১২১৫-১২২৫] বিবৃতি ও বক্তৃতা

ত্রিপুরার কমলপুর (ভারত)-কুরমাঘাট (বাংলাদেশ) সীমান্ত হাটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাই কমিশনার শ্রী বিক্রম দোরাইস্বামীর বক্তব্য [০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২] [১২১৫-১২২৫]

ত্রিপুরার কমলপুর (ভারত)-কুরমাঘাট (বাংলাদেশ) সীমান্ত হাটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাই কমিশনার শ্রী বিক্রম দোরাইস্বামীর বক্তব্য

[০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২] [১২১৫-১২২৫]

 

জনাব টিপু মুনশি, এমপি, বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় বাণিজ্য মন্ত্রী

শ্রী বিপ্লব কুমার দেব, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, ত্রিপুরা সরকার

শ্রী মনোজ কান্তি দেব, ত্রিপুরা সরকারের মাননীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী

জনাব মোঃ আব্দুস শহীদ, বাংলাদেশের মাননীয় সংসদ সদস্য

শ্রী টিংকু রায়, চেয়ারম্যান, ত্রিপুরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড

ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাগণ,

শিল্প ও গণমাধ্যমের বন্ধুরা,

 

শুভ অপরাহ্ণ,

কামালপুর-কুরমাঘাট সীমান্ত হাটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে কামালপুরে এসে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এই অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আমি ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ত্রিপুরা সরকারকে অভিনন্দন জানাই।

 

. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আজ "সোনালী অধ্যায়ে"। আমাদের বন্ধুত্বের এই 'স্বর্ণিম জয়ন্তী' উদযাপনের বছরে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ও মাননীয় রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কোবিন্দ উভয়ের সফর আয়োজন করার সম্মান প্রাপ্ত হয়েছি। একই বছরে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কোনো দেশ সফরে যাওয়া ছিল নজিরবিহীন। কিন্তু অনুষ্ঠানটিও ছিল ততটা গুরুত্বপূর্ণ– বাংলাদেশের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫০তম বার্ষিকী এবং ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি। এটি সমতা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে রচিত আমাদের শক্তিশালী সম্পর্কের একটি প্রতিফলন এবং এটি দেখিয়েছে যে, আমরা বাংলাদেশকে কতটা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি।

 

. বন্ধুরা, আমাদের বন্ধুত্বের এই ৫০তম বছরে, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ত্রিপুরার বিশেষ ভূমিকার কথা স্মরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের সময়, এই ত্রিপুরা রাজ্য তাদের নির্যাতিত ভাই ও বোনদের জন্য তার হৃদয় ও বাহু প্রসারিত করে দিয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে আনুমানিক ১৩ লাখ লোককে আশ্রয় দিয়েছিল। এই সংখ্যা ছিল রাজ্যের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি।

 

. আজ আমরা কমলপুরে আরেকটি মাইলফলক অনুষ্ঠানের সাক্ষী হতে এসেছি। এটা কেন গুরুত্বপূর্ণ? কারণ, বাংলাদেশ আজ আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী; এই অঞ্চলে আমাদের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার; এবং আমাদের সবচেয়ে বিস্তৃত ও গভীর সরকারের সাথে সরকারের সম্পর্কও বাংলাদেশের সাথে। ২০২০-২১ সালে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে এবং বাংলাদেশ ভারতে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রপ্তানি করেছে। এবং বাণিজ্যের এই সমৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে উন্নত যোগাযোগ ও সহজতর বাণিজ্য প্রক্রিয়ার জন্য যৌথ প্রচেষ্টার ফলে। সীমান্ত হাট হচ্ছে বাণিজ্য পরিচালনা ও তৃণমূলে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতির একটি প্রধান মাধ্যম। আর তাই, আজ আমরা ত্রিপুরা-বাংলাদেশের মধ্যে তৃতীয় সীমান্ত হাটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের সাক্ষী হতে যাচ্ছি। এছাড়াও, আমরা উত্তর ত্রিপুরার পালবস্তিতে, খোয়াইয়ের বেলচামার এবং ত্রিপুরার বেলোনিয়ায় ঘোষকামারে তিনটি নতুন সীমান্ত হাটের জন্য স্থান চিহ্নিত করেছি।

 

. সীমান্ত হাট আমাদের দুই দেশের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যে এবং মানুষে-মানুষে যোগাযোগের নতুন মাত্রা যোগ করছে। গবেষণা ও প্রত্যক্ষ পর্যালোচনা অনুসারে, সীমান্ত হাট স্থানীয় সম্প্রদায়ের, বিশেষ করে নারীদের জীবনমান উন্নয়নে সাহায্য করেছে। সীমান্ত হাট বাণিজ্যের অনানুষ্ঠানিকীকরণে সাহায্য করে, স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে এবং তৃণমূলে নিষ্পত্তিযোগ্য আয়ের অতিরিক্ত উৎস তৈরি করে। আর তাই, এগুলি উভয় সরকারের জন্যই অগ্রাধিকারের বিষয়।

 

. বিশেষ করে, বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার মধ্যে বাণিজ্যের কথা বলতে গেলে, আগরতলা-আখাউড়া, শ্রীমন্তপুর-বিবিরবাজারে দু’টি সমন্বিত চেকপোস্ট, ছয়টি স্থল শুল্ক স্টেশন ও দু’টি সীমান্ত হাট দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে সহজতর করছে৷ বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আইসিপি আগরতলা থেকে ১৩টি এবং আইসিপি শ্রীমন্তপুর থেকে ১৯টি অগ্রাধিকার পণ্য রপ্তানির অনুমতিও পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালে আটটি অগ্রাধিকার পণ্যের অনুমতির পাশাপাশি এই পণ্যগুলো রপ্তানির অনুমতি দেয়া হয়েছিল৷ আমরা আশা করি, অন্তত আগরতলাকে অবাধ বাণিজ্যের অনুমতি দিয়ে একটি বন্দরে উন্নিত করে এই প্রক্রিয়াটিকে ভবিষ্যতে আরও উন্নত করা সম্ভব হবে, যার জন্য আমরা মাননীয় মন্ত্রী জনাব টিপু মুনশির সাহায্য কামনা করছি।

 

. বন্ধুরা, ভারতীয় ঋণের পাশাপাশি অনুদানের অধীনে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলি সম্পাদিত হওয়ার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও শক্তিশালী হবে৷ ভারত ও বাংলাদেশ আশুগঞ্জে একটি অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার বন্দর (আইসিপি) স্থাপনে এবং আখাউড়া স্থলবন্দর ও আশুগঞ্জের মধ্যে বিদ্যমান সড়ককে ৪ লেনে প্রশস্ত করতে বিনিয়োগ করছে। ইতোমধ্যে কাজ চলছে। এই দু’টি প্রকল্প ভারতীয় ঋণচুক্তির অধীনে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে দুই প্রধানমন্ত্রী ফেনী নদীর উপর দিয়ে সাব্রুমকে রামগড়ের সাথে সংযোগকারী একটি "মৈত্রী সেতু" উদ্বোধন করেছিলেন৷ আমরা শীঘ্রই রামগড়ে শুল্ক ও অভিবাসন সুবিধার উন্নয়নের জন্য আশাবাদী৷ আমরা শীঘ্রই রামগড় থেকে বারইয়ারহাট পর্যন্ত একটি উন্নত রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করব, যাতে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশের সুযোগ উন্মুক্ত করা যায়। একইভাবে, ভারত সরকারও অনুদানের অর্থায়নে আখাউড়া ও আগরতলার মধ্যে একটি নতুন রেল সংযোগ নির্মাণ করছে। খুব শিগগিরই এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

. নদীপথের ক্ষেত্রে, আমাদের নদীগুলি যুগে যুগে মানুষ ও পণ্য বহন করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে, ভারত ও বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে অভ্যন্তরীণ নৌ বাণিজ্য ও ট্রানজিট (পিআইডব্লিউটিটি) প্রোটোকল স্বাক্ষর করে নৌপথগুলো পুনরুজ্জীবিত করার জন্য। এই প্রোটোকলের সর্বশেষ সংযোজন হিসেবে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গোমতী নদীর উপর সোনামুড়া-দাউদকান্দি রুট চালু করা হয়েছিল। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলো ঠিক থাকলে, ব্যবসার জন্য উভিয় পক্ষের এগিয়ে আসার এবং এই সংযোগ পথগুলি ব্যবহার করার জন্য এখন উপযুক্ত সময়। এগুলো প্রকৃতপক্ষে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে একটি গুণক প্রভাব রাখার মতন সম্ভাবনাময়।

 

. আমাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্বের আরেকটি উদাহরণ হল, ২০১৮ সালে স্বাক্ষরিত বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের ট্রানজিট কার্গো চলাচলের জন্য চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের চুক্তি। আমি জানাতে পেরে আনন্দিত যে, উভয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে, ২০২০ সালের ২৩ জুলাই এই চুক্তির অধীনে প্রথম পরীক্ষামূলক চলাচল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। আমরা এই বছর এটি সম্পূর্ণরূপে চালু করার জন্য কাজ করছি।

 

১০. বন্ধুরা, আপনারা জানেন যে, ভৌগোলিক নৈকট্য আমাদের বড় সুবিধা এবং পারস্পরিক সুবিধার জন্য আমাদের একে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের সম্পূর্ণ সংযোগ সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব হলে, বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, খুলনা, মংলা, চিলমারী, দাউদকান্দি এবং ভারতের পাণ্ডু, সোনামুড়া, করিমগঞ্জ, ধুবরি, সাব্রুম ইত্যাদি শহরগুলি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাক্ষী হবে। আমি ব্যবসায়িক সম্প্রদায়গুলিকে বর্ধিত সংযোগের কারণে সৃষ্ট সম্ভাবনাগুলিকে কাজে লাগাতে এবং বিদ্যমান সমন্বয় আরও গভীর করার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। বিশেষ করে, আমি নিশ্চিত যে, একটি নতুন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং বর্ধিত সংযোগ বিকল্পগুলির সাথে সাব্রুম একটি শিল্প কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হবে।

 

১১. আজ, আমি ত্রিপুরা সরকার এবং ত্রিপুরার ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে বাংলাদেশ সফর করার জন্য এবং তাদের ব্যবসায়িক অংশীদারদের সাথে স্টেকহোল্ডার সংলাপ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

 

১২. আমি আবারও সকলকে অভিনন্দন জানাই যারা ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য সহজীকরণ ও উন্নতির জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন এবং জনগণের সাথে জনগণের সংযোগ স্থাপন করছেন। বিশেষ করে, আমি বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় বাণিজ্য মন্ত্রী জনাব টিপু মুনশিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই নিরন্তর সহায়তার জন্য। আজ আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমি ত্রিপুরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি সম্মানিত যে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এখানে সশরীরে উপস্থিত আছেন। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, আমরা খুব শীঘ্রই কামালপুর-কুরমাঘাট সীমান্ত হাট উদ্বোধনের জন্য ফিরে আসতে পারব!

ধন্যবাদ।

****