কুমুদিনী কমপ্লেক্সে আটতলা ভিত্তিসহ দ্বিতল ছাত্রীনিবাস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাই কমিশনারের বক্তব্য বিবৃতি ও বক্তৃতা

কুমুদিনী কমপ্লেক্সে আটতলা ভিত্তিসহ দ্বিতল ছাত্রীনিবাস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাই কমিশনারের বক্তব্য

ভারতীয় হাই কমিশন

ঢাকা

কুমুদিনী কমপ্লেক্সে আটতলা ভিত্তিসহ দ্বিতল ছাত্রীনিবাস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাই কমিশনারের বক্তব্য

[মির্জাপুর, টাঙ্গাইল]

রাজীব প্রসাদ সাহা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট,

শ্রীমতী সাহা, 

 

প্রিয় ছাত্রীগণ,

আবারও কুমুদিনীতে আসতে পেরে এবং এই ছাত্রীনিবাস উদ্বোধনের সুযোগ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। আমি আগেও এখানে এসেছি এবং বেঙ্গল লিমিটেডের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের দাতব্য কার্যক্রম আমাকে মুগ্ধ করেছে। এই সংগঠনটি অনেকের জীবনে ইতিবাচক অবদান রেখেছে। এই অবদান শ্রী রণদা প্রসাদ সাহা যে লক্ষ্যে, উনিশশো চুয়াল্লিশ সালে ভারতেশ্বরী হোমস নামে মেয়েদের আবাসিক স্কুলটি চালু করেছিলেন, সেই লক্ষ্যের প্রতি সম্মান। এই প্রতিষ্ঠানের দাতব্য কার্যক্রম মেডিকেল ও নার্সিং কলেজ, হাসপাতাল এবং গ্রাম-প্রসার প্রকল্পের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কুমুদিনীর প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে শিক্ষার মাপকাঠি।

(২) এই কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা রায় বাহাদুর শ্রী রণদা প্রসাদ সাহার স্বপ্নকে আমি গভীরভাবে সম্মান করি। শ্রী সাহা একজন স্বনির্ভর মানুষ ছিলেন। তাঁর সমস্ত সম্পদ তিনি জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য ট্রাস্টকে দান করেছিলেন। শ্রী সাহার নিঃস্বার্থ জনকল্যাণমূলক কাজ আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা। আজকে এখানে দাঁড়িয়ে আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গ করা ত্রিশ লাখ শহীদকে স্মরণ করছি। জাতির শহীদদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ এবং তাঁদের ইতিহাস তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং এ কমপ্লেক্সের মধ্য দিয়েও তা ছড়িয়ে পড়বে। ভারত ও বাংলাদেশকে অবশ্যই প্রতিবেশী হিসেবে শান্তিতে সহাবস্থান করতে হবে এবং সুসময় ও দু:সময়ে পাশে থাকতে হবে।

(৩) আমি আগেরবার যখন বাংলাদেশে এসেছিলাম তার সাথে আজকের বাংলাদেশের কোন মিল নেই। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে আট শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এছাড়াও, খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সড়ক, রেল ও নৌসংযোগ উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধি এবং মানব উন্নয়ন সূচকে বিশেষভাবে নারীর উন্নয়নে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে গেছে। একজন প্রতিবেশী এবং বন্ধু হিসেবে আমরা আপনাদের অর্জনে গর্বিত। উনিশশো একাত্তর থেকে আজ পর্যন্ত আমরা আপনাদের অগ্রযাত্রার অংশ হতে পেরেছি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অভিন্ন সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগ, আমাদের উভয় দেশের সাধারণ মানুষের ভবিষ্যতের জন্য একত্রে কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগাবে- কারণ আমরা দুই দেশই উন্নয়নের পথে সহযাত্রী।

(৪) একটি উন্নত সমাজের জন্য নারী শিক্ষা অপরিহার্য এবং কুমুদিনী ট্রাস্ট বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের জাতীয় প্রচেষ্টায় যোগদান করেছে। আমরা এই মহৎ সংগঠনের প্রচেষ্টায় অবদান রাখতে আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। আমরা জেনেছি যে, মূল হোস্টেল ভবনটি আশি বছরের পুরনো এবং মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। আমাদের জন্য এটি ছিল নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রাখার একটি সুযোগ, যাতে অল্পবয়সী মেয়েরা শিক্ষিত হয়ে তাদের স্বপ্নপূরণ করতে পারে। এটি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছাত্রীদের এ্ই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে উৎসাহিত করবে। আমরা খুশি যে, প্রাথমিকভাবে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে আটতলা ভিত্তিসহ দ্বিতল ছাত্রীনিবাস নির্মাণে আমরা সহায়তা করতে পেরেছি। ভারত সরকার ইতোপূর্বে নয় কোটি টাকা ব্যয়ে কুমুদিনী কমপ্লেক্সের ভিতরে অবস্থিত হাসপাতাল থেকে নির্গত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প নির্মাণ করেছিল। দুই হাজার পনের সালে, বাংলাদেশ সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন।

(৫) বাংলাদেশের নারীরা সব ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে যার বড় উদাহরণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিচার বিভাগ, প্রশাসন, প্রতিরক্ষা, উদ্যোক্তা এবং কূটনীতিতে শীর্ষস্থানীয় পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে নারীরা অনেক বাধা অতিক্রম করেছে। তোমাদের মধ্যে অনেকেই সফল, স্বাধীন ও সক্ষম নারী হিসেবে বিভিন্ন নেতৃত্বস্থানীয় পদে উন্নীত হবে, যারা সমাজে নিজেদের জন্য জায়গা তৈরি করে সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখবে। একজন কূটনীতিক হিসেবে আমি আশা করি, তোমাদের কাউকে বাংলাদেশের হাই কমিশনার বা রাষ্ট্রদূত হিসেবে দেখতে পাব। সবসময় মনে রাখবে, তুমি যদি লক্ষ্য স্থির করে তা অর্জন করতে কঠোর পরিশ্রম কর, তবে কিছুই অসম্ভব নয়।

ধন্যবাদ সবাইকে।

****