৬ ডিসেম্বর ২০২২-এ মৈত্রী দিবস উপলক্ষ্যে হাই কমিশনারের ভাষণ বিবৃতি ও বক্তৃতা

৬ ডিসেম্বর ২০২২-এ মৈত্রী দিবস উপলক্ষ্যে হাই কমিশনারের ভাষণ

৬ ডিসেম্বর ২০২২-এ মৈত্রী দিবস উপলক্ষ্যে হাই কমিশনারের ভাষণ

 

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মাননীয় মন্ত্রী,

জনাব আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক;

সম্মানিত অতিথিবৃন্দ,

ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ।

মৈত্রী দিবসের ৫১তম বার্ষিকীর এই উদ্‌যাপনে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত – ৫১ বছর আগে এই দিনে ভারত বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।

এটি একটি অত্যন্ত বিশেষ দিন, কারণ এই স্বীকৃতিটি মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় ও বাংলাদেশের মিত্রবাহিনীর প্রকৃত বিজয়ের দশ দিন আগে এসেছিল। এই দিনটি আমাদের দুই দেশের মধ্যে সমতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সংহতির ভিত্তিতে একটি অংশীদারিত্বের সূচনা ঘটায়। মুক্তি সংগ্রামে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর যে অপরিসীম গর্ববোধ ভারতীয় জনগণ সবসময় অনুভব করে, তাকেও এই দিনটি তুলে ধরে।

আজকের মতো উপলক্ষ্যগুলো তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এগুলো আমাদের যৌথ অর্জনসমূহকে প্রতিফলিত ও আনন্দ করার সুযোগ দেয়। এই মুহূর্তগুলো অপূর্ণ প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়ন করার এবং আগামীর পথে আমাদের অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করার সংকল্প গ্রহণের জন্যও মূল্যবান।

গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে অত্যন্ত দ্রুত উন্নয়ন ঘটেছে। দেশের সাফল্য ও অবস্থান আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। এর মানব উন্নয়ন সূচক অন্যদের জন্য অনুকরণীয় একটি উদাহরণ।

আর এ সবই সম্ভব হয়েছে তাঁদের আত্মত্যাগের ফলে, এই দিনটি দেখার জন্য যাঁরা আর বেঁচে নেই। তাই আজ মুক্তির লক্ষ্যে সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়া সেই লক্ষ লক্ষ বীর মুক্তিসেনাদের স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন।

বন্ধুগণ,

১৯৭১ সাল থেকে আজ অবধি ভারত ও বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। আমাদের উভয় দেশের অর্থনীতিই দ্রুত বর্ধনশীল। অগ্রগতি ও উন্নত ভবিষ্যতের জন্য ক্রমবর্ধমান উচ্চাকাঙ্ক্ষা আমাদের সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ এবং নতুন গতির সঞ্চার করছে।

আমাদের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে দুই দেশের নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে শক্তিশালী প্রতিশ্রুতি বিদ্যমান। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। আমাদের জন্য এটি ‘প্রতিবেশী প্রথমে’; তবে প্রতিবেশীদের মাঝেও ‘বাংলাদেশ প্রথমে’।

আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আজ সত্যিই বহুমুখী এবং একে অপরের জাতীয় উন্নয়নের পরিপূরক। আমাদের সহযোগিতা শুধু ব্যবসায়, বাণিজ্য, উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, নিরাপত্তা ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনার মতো ঐতিহ্যবাহী ক্ষেত্রগুলোকে নয় বরং ক্লিন এনার্জি, আইটি, স্পেস ইত্যাদির মতো নতুন ক্ষেত্রসমূহকেও অন্তর্ভুক্ত করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরকালে, আমাদের নেতৃবৃন্দ সমগ্র অঞ্চলের স্বার্থে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য তাঁদের পারস্পরিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

ভারত বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিশীল উন্নয়ন সহযোগী। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশ আজ ভারতের বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার, যার ক্রেডিট লাইন ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। এই সকল ক্রেডিট লাইনের অধীনে আমাদের প্রকল্পসমূহের ৮০%-এরও বেশি ব্যয় হচ্ছে অবকাঠামো ও সংযোগের জন্য।

একই সাথে, বাংলাদেশে আমাদের হাই ইমপ্যাক্ট কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টসমূহ তৃণমূল পর্যায়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে।

জনগণের জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনে আমাদের যৌথ স্বপ্ন পূরণ করার লক্ষ্যে পরস্পরের জন্য উপকারী আন্তঃসীমান্ত সংযোগ গড়ে তোলার মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ করছি যা আমাদের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মানুষে-মানুষে সংযোগকে আরও শক্তিশালী করবে।

আমাদের রয়েছে অমিত সম্ভাবনা।

এমনকি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। ভারত এই মাসে জি-২০ এর সভাপতিত্ব গ্রহণ করায় আমাদের আমন্ত্রণে যৌথ কল্যাণের উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেওয়ার এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে বাংলাদেশ তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা দিয়ে মূল্যবান অবদান রাখার জন্য একটি অতিথি দেশ হিসেবে এই আলোচনায় যোগদান করায় আমরা আনন্দিত।

বন্ধুগণ,

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দিয়েছে। এটি আমাদের আদর্শিক মানচিত্রকেও পরিবর্তন করেছে: আপনার স্বাধীনতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে যে সংস্কৃতি, সভ্যতা ও ভাষার সর্বজনীন বন্ধনগুলো মৌলিকভাবে মানুষকে অন্য যেকোনো কিছুর তুলনায় ঘনিষ্ঠভাবে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করে। আপনাদের মুক্তি সংগ্রাম বর্বরতা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের বিজয়ের অনিবার্যতাও তুলে এনেছিল।

আমাদের বন্ধুত্বের মূলে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের যৌথ আত্মত্যাগ ও বঙ্গবন্ধুর মূল্যবোধ, আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা পরিচালিত।

মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আমাদের সৈন্যরা একত্রে রক্তপাত করেছে, আমরা যে বন্ধনগুলোর ভাগীদার, সেগুলো চিরন্তন এবং সবসময় কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে।

ভারত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং ভবিষ্যতেও বৃহত্তর সমৃদ্ধি ও সাফল্যের পথে তাঁদের নিয়ে একসঙ্গে হাঁটতে প্রস্তুত থাকবে। বিশেষ করে গত এক দশকে আমরা আমাদের অংশীদারিত্বে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন করেছি। আমরা আমাদের বন্ধুত্ব ও আমাদের সর্বজনীন ইতিহাসের ভিত্তি তৈরি করার লক্ষ্যে আরও কার্যক্রম করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এটি করার সাথে সাথে আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের যৌথ ইতিহাসকে আত্মস্থ করবে এবং আমাদের অংশীদারিত্বকে চিরস্থায়ী করতে ১৯৭১ সালের ঐতিহ্যের ধারাকে সংরক্ষণ করে চলবে।

এটি হবে সত্যিকার অর্থে সেই লাখো শহিদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা যাঁরা এই দেশের ভবিষ্যতের জন্য তাঁদের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছিলেন। এটি আমাদের চিরন্তন ও কালের পরীক্ষিত বন্ধুত্বের চেতনার সাথেও থাকবে যা আমরা আজ উদ্‌যাপন করছি।

আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।

জয় বাংলা, জয় হিন্দ!

ভারত-বাংলাদেশের মৈত্রী চিরজীবী হোক!

***