ভারত থেকে আসা মানবিক সহায়তা হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাই কমিশনারের বক্তব্য বিবৃতি ও বক্তৃতা

ভারত থেকে আসা মানবিক সহায়তা হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাই কমিশনারের বক্তব্য

ভারতীয় হাই কমিশন

ঢাকা

 

ভারত থেকে আসা মানবিক হায়তা হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাই কমিশনারের বক্তব্য

[কক্সবাজার; ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮]

জনাব মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া), মাননীয় মন্ত্রীদুর্যোগ ব্যবস্থাপনা  ত্রাণ মন্ত্রণালয়,

জনাব মোশাহ কামালসচিবদুর্যোগ ব্যবস্থাপনা  ত্রাণ মন্ত্রণালয়,

জনাব মোহাম্মদ আবুল কালামঅতিরিক্ত সচিবশরণার্থীত্রাণ  প্রত্যাবাসন কমিশনার,

জনাব হাফিজ আহমেদ মজুমদারসভাপতিবাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি,

জনাব ফিরোজ সালাউদ্দীনমহাসচিববাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি,

শ্রী বিক্রম দোরাইস্বামীযুগ্মসচিব (বিএম), বিদেশ মন্ত্রক,

এবং গণমাধ্যমের বন্ধুগণ,

গত একবছর ধরে বাংলাদেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত প্রায় ১০ লাখ মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে।

এই মানবিক আচরণ ভারত ও সংশ্লিষ্ট সকলের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রতিবেশী, বন্ধু এবং অংশীদার হিসাবে, বাস্তুচ্যুত মানুষদের বিশাল ঢলে সৃষ্ট ত্রাণ প্রয়োজনীয়তা পূরণে বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত।

আজ আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি মাননীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী জনাব মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী (মায়া)-কে আমাদের তৃতীয় পর্যায়ের ত্রাণ সহযোগিতা (১ মিলিয়ন লিটারের বেশি সুপার কেরোসিন তেল এবং ২০ হাজার কেরোসিন স্টোভ) হস্তান্তর করতে পেরে আনন্দিত।

বন্ধুগণ,

স্মরণ করা যেতে পারে যে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের মাননীয় বিদেশমন্ত্রী শ্রীমতি সুষমা স্বরাজ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত মানুষদের জন্য অপারেশন ইনসানিয়াৎ’ এর আওতায় ত্রাণ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ত্রাণসামগ্রীর প্রথম চালানটি সরবরাহ করা হয় যার মধ্যে ছিল চাল, ডাল, দুধ ইত্যাদি ভর্তি ৪.৫ লাখ খাবারের প্যাকেট। এগুলো মাননীয় সড়ক, পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী জনাব মো. ওবায়দুল কাদেরকে হস্তান্তর করা হয়।

আমাদের বিদেশসচিব ২০১৮ সালের এপ্রিলে তাঁর ঢাকা সফরকালে দ্বিতীয় পর্যায়ের মানবিক সহায়তার ঘোষণা করেন।

২০১৮ সালের মে মাসে ত্রাণসামগ্রীর দ্বিতীয় চালানটি হস্তান্তর করা হয়। ৩৭৩ মেট্রিক টনের এই ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে ছিল শুঁটকিমাছ, গুড়ো দুধ, শিশুখাদ্য এবং বর্ষাকালে ব্যবহারের জন্য রেইনকোট ও গামবুট। এই চালানটি মাননীয় মন্ত্রী জনাব মায়াকে হস্তান্তর করা হয় যিনি আজকেও উপস্থিত হতে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।

বন্ধুগণ,

ভারত রাখাইন রাজ্যে সুসজ্জিত গৃহনির্মাণ শুরু করেছে। আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমরা ২৫০টি বাড়ি নির্মাণ করছি যেগুলোর নির্মাণকাজ শেষের দিকে। মিয়ানমারের মংডু জেলার ক্যিং সং নামের একটি গ্রামে ৫০টি বাড়ির ভিত্তি নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এই বাড়িগুলি নির্মাণের উদ্দেশ্য হল উৎখাত হওয়া ব্যক্তিদের বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাবাসনে সহায়তা করা।

বন্ধুগণ,

২০১৮ সালের মে মাসে মাননীয় বিদেশমন্ত্রী বাস্তুচ্যুত মানুষদের রাখাইন রাজ্যে নিরাপদ, দ্রুত এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছিলেন।

ভারতের মাননীয় গৃহমন্ত্রী ২০১৮ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফরকালে মিয়ানমারের এই বাস্তুচ্যুত মানুষদেরকে নিজভূমিতে প্রত্যাবর্তনে সহায়তা করার জন্য ভারতের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

ভারত প্রয়োজনের সময় সর্বদা বাংলাদেশের পাশে থেকেছে। আমাদের দু’দেশের সম্পর্কের ভিত্তি বিশ্বাস, বন্ধুত্ব ও শহীদদের আত্মত্যাগ, যা যে কোন কৌশলগত সম্পর্কের ঊর্ধ্বে। বন্ধুত্বের এই চেতনাতেই আমরা তাঁদেরবোঝা হালকা করতে এগিয়ে এসেছি এবং ভবিষ্যতেও সাহায্য করব।

আমরা বাস্তুচ্যুত মানুষদের দুর্দশা বুঝতে পারি এবং তাদের সহায়তায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। আমি কিছু ক্যাম্পও পরিদর্শন করব।

আমি জানাতে চাই যে, এই বাস্তুচ্যুত মানুষদের সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকতে ভারত মানবিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। আমাদের এই সহযোগিতার মনোভাব ত্রাণসামগ্রী প্রদানের তৃতীয়পর্যায়ের পরও অব্যাহত থাকবে।

পরিশেষে, আমি আজকে এখানে উপস্থিত থাকার জন্য বাংলাদেশের বিশিষ্টজনদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের বিদেশ মন্ত্রকের মহাপরিচালক, রাষ্ট্রদূত শ্রী বিক্রম দোরাইস্বামীকে তাঁর উপস্থিতির জন্য বিশেষ ধন্যবাদজানাতে চাই।

সবাইকে ধন্যবাদ।

জয় বাংলাদেশ, জয় হিন্দ!

****