বাংলাদেশে ভারত সরকারের এলওসি-র আওতাধীন প্রকল্পসমূহের ওপর হাই লেভেল প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির তৃতীয় বৈঠকের জন্য বক্তব্য

বিবৃতি ও বক্তৃতা

বাংলাদেশে ভারত সরকারের এলওসি-র আওতাধীন প্রকল্পসমূহের ওপর হাই লেভেল প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির তৃতীয় বৈঠকের জন্য বক্তব্য

বাংলাদেশে ভারত সরকারের এলওসি-র আওতাধীন প্রকল্পসমূহের ওপর হাই লেভেল প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির তৃতীয় বৈঠকের জন্য বক্তব্য

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান,
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকর্মীগণ, শুভ সকাল৷

১. ভারত সরকার কর্তৃক বাংলাদেশ সরকারকে প্রদত্ত কনসেশনাল লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় নেওয়া প্রকল্পসমূহের জন্য হাই লেভেল প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির ৩য় সভায় আজ এখানে উপস্থিত হতে পেরে আমি আনন্দিত৷ শুরুতেই ইআরডি-এর সকল সহকর্মীকে সংক্ষিপ্ত নোটিশে এই সভাটি আয়োজন করার জন্য এবং আপনাদের আজকের আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার সঙ্গে আজ যোগদান করেছেন আমার ঢাকাস্থ কর্মীদল, ডিপিএ অ্যান্ড ইআর সচিব জনাব প্রভাত কুমারের নেতৃত্বে দিল্লিস্থ বিদেশ মন্ত্রকের সহকর্মীগণ এবং এক্সিম অব ইন্ডিয়ার সহকর্মীগণ।

২. ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের অন্যতম নিদর্শন হলো উন্নয়ন সহযোগিতায় আমাদের শক্তিশালী অংশীদারত্ব। বাংলাদেশ ভারতের বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার এবং আমরা বিভিন্ন সেক্টরে প্রকল্পের জন্য প্রায় সাড়ে নয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করেছি, যা সারা বিশ্বে আমাদের সামগ্রিক অর্থায়ন প্রতিশ্রুতির প্রায় এক-চতুর্থাংশ। কনসেশনাল লাইনস অব ক্রেডিট (এলওসি)-এর অধীনে প্রায় আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করা হয়েছে এবং এই তহবিলের আওতায় ৪২টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যার মাঝে কনসেশনাল ফাইন্যান্সিং স্কিমের অধীনে দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি প্রদান করা হয়েছে যা দিয়ে আমরা রামপালে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ করছি।

৩. আজকের বৈঠকটি উচ্চ পর্যায়ের প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের বিষয়ে আলোচনার তৃতীয় সংস্করণ। এই পর্যালোচনা প্রক্রিয়াটি এলওসি প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করার জন্য তৈরি করা তিনটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি, অন্য দুটি হলো টেকনিক্যাল কমিটি এবং ফুল-স্কেল দ্বিপাক্ষিক রিভিউ মিটিং৷ এই প্রক্রিয়াসমূহ ছাড়াও, উভয় পক্ষই নিয়মিতভাবে সাইট পরিদর্শন এবং প্রযুক্তিগত স্তরে খুব ঘন ঘন প্রকল্পভিত্তিক পর্যালোচনা করে অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে থাকে। পদ্ধতিগত ও প্রায়োগিক বিষয়সমূহের দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছিল এবং এটি একটি অত্যন্ত ইতিবাচক অগ্রগতি যে, তাঁদের দায়িত্বের অধীনে থাকা বিষয়সমূহের মাঝে অধিকাংশেরই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।

৪. গত কয়েক বছরে, আমাদের এলওসি-র আওতাধীন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ও ব্যয়নের গতি বেড়েছে। সংকটপূর্ণ অতিমারি চলাকালে অগ্রগতি বিশেষভাবে উত্সাহজনক হয়েছে। আমরা ১৪টি প্রকল্প সম্পন্ন করেছি এবং বাকি ২৮টি প্রকল্প উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। উভয় পক্ষ থেকে ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে, আমরা প্রকল্পগুলোকে ডিপিপি পর্যায় থেকে টেন্ডারিং পর্যায়ে এবং টেন্ডারিং পর্যায় থেকে প্রকৃত বাস্তবায়ন পর্যায়ে নিয়ে যেতে কার্যনির্বাহ করছি। এমনকি, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে আমি হাই কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে, আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছি যেমন ‘মোংলা বন্দর আপগ্রেডেশন’ প্রকল্পের জন্য পিএমসি চুক্তি প্রদান এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক টঙ্গী-জয়দেবপুরের মধ্যে ‘ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেললাইন প্রকল্প’-এর অগ্রাধিকারমূলক স্ট্রেচের উদ্বোধন।

৫. কোভিড-১৯ কর্তৃক উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, গত দুই বছরে ব্যয়ন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এলওসি-র অধীনে, ২০২১-২২ অর্থবছরের (ভারতীয়) জন্য ব্যয়ন ছিল ২২৯.১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০২০-২১ অর্থবছরের (ভারতীয়) জন্য ব্যয়নের তুলনায় ৬২% বেশি এবং বাংলাদেশের অন্য যেকোনো উন্নয়ন সহযোগীর চেয়ে বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের (ভারতীয়) জন্য, এখন পর্যন্ত মোট ব্যয়ন করা হয়েছে ৩৩৮.৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা এক্সিম ব্যাঙ্কের কাছ থেকে বুঝতে পেরেছি যে জুলাই ২০২২ থেকে আজ অবধি ১৯১.৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ন করা হয়েছে এবং এই হারে, ২০২৩ সালের জুন মাসে বাংলাদেশি অর্থবছরের শেষ হতে আরও কয়েক মাস বাকি থাকা অবস্থায় ভারতের আবারও বাংলাদেশের দ্রুততম ও বৃহত্তম ব্যয়নকারী উন্নয়ন অংশীদার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

৬. আজকের বৈঠকটি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সকল অনিষ্পন্ন সমস্যাসমূহ পর্যালোচনা করার এবং সেগুলোর সমাধান খোঁজার চেষ্টা করার একটি সুযোগ যাতে আমাদের প্রকল্পগুলোর উন্নয়নের গতি আরও ত্বরান্বিত করা যায়। আজকের বৈঠকটি আয়োজন করার জন্য আমি আবারও আমার বাংলাদেশ পক্ষের সকল সহকর্মীকে ধন্যবাদ জানাই।

আপনাদেরকে ধন্যবাদ।

***

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ঢাকা