মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে হাই কমিশনারের বক্তব্য বিবৃতি ও বক্তৃতা

মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে হাই কমিশনারের বক্তব্য

ভারতীয় হাই কমিশন

ঢাকা

মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি চেক বিতরণ অনুষ্ঠান

০৩ মে, ২০১৮

(মূল মিলনায়তন, বাংলাদেশে জাতীয় জাদুঘর, শাহবাগ, ঢাকা)

(ভারতীয় হাই কমিশনার শ্রী হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার বক্তব্য)

প্রথমেই আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য

২০০৬ সালে ভারত সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরাধিকারীদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি চালু করেছে উচ্চমাধ্যমিক স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করা হয় স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর ২৪,০০০ টাকা করে চার বছর এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর ১০,০০০ টাকা করে দুই বছর বৃত্তি পেয়ে থাকে এই স্কিমের আওতায় পর্যন্ত ১০ হাজার ৯৩৬ জন শিক্ষার্থী উপকৃত হয়েছেন এবং এ উদ্দেশ্যে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

আপনাদের হয়তো মনে আছে যে, ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদ মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে তিনটি উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছিলেন

ভারতীয় সামরিক হাসপাতালগুলোতে ১০০ জন মুক্তিযোদ্ধার বিনামূল্যে চিকিৎসা

সকল মুক্তিযোদ্ধার জন্য পাঁচ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা

নতুন মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি স্কিম

আমি আজ অত্যন্ত খুশি যে, সব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়েছে মেডিকেল স্কিমের জন্য বাংলাদেশের সকল জেলা থেকে ১০০ জন রোগীকে চিহ্নিত করা হয়েছে এটি একটি অত্যন্ত সুশৃঙ্খল কর্মসূচী ছিল যেখানে জেলা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধিরা যোগ্য রোগীদের নাক্তকরণে জড়িত ছিলেন এরপর সেই তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক চূড়ান্ত হয় বর্তমানে আমরা প্রতিটা রোগীর বিশেষ চিকিৎসা সেবার উপযুক্ত হাসপাতাল নির্ধারণ করছি

ভারতীয় ভিসা পেতে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছি ভিসা কেন্দ্রে নির্ধারিত বিশেষ ডেস্কগুলিতে তারা কোনও সাক্ষাতের তারিখ ছাড়াই আবেদন জমা দিতে পারবেন তারা পাঁচ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা পান এখন পর্যন্ত হাজার ৫১ জন মুক্তিযোদ্ধা এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হয়েছে

নতুন বৃত্তি প্রকল্পের আওতায় পরবর্তী পাঁচ বছরে মোট ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হবে এবং জন্য ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে প্রতি বছর উচ্চমাধ্যমিক স্নাতক পর্যায়ে এক হাজার করে মোট দুই হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হবে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা এককালীন 0,000 টাকা এবং স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা 0,000 টাকা বৃত্তি পাবেন এই প্রকল্প চলমান পুরাতন বৃত্তি প্রকল্পের সঙ্গে একসাথে চালানো হবে

বছর পুরাতন বৃত্তি প্রকল্পের আওতায় স্নাতক পর্যায়ে ৪০০ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হবে নতুন প্রকল্পের জন্য মোট হাজার ৬২১ জন (স্নাতক পর্যায়ে হাজার জন এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ৬২১ জন) শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছে ঢাকা বিভাগের শিক্ষার্থীদের হাতে আজ চেক হস্তান্তর করা হবে পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, যশোর এবং ময়মনসিংহে একই ধরণের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে

মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণমূলক উদ্যোগ বাস্তবায়নকালে আমাদের প্রচেষ্টা ছিল বাংলাদেশের সব জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছানো এই বাছাই প্রক্রিয়ায় ভারতীয় হাই কমিশনকে সহায়তা করায় আমি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী এবং তাঁর সম্মানিত মন্ত্রণালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ তাদের সক্রিয় সমর্থন ছাড়া প্রান্তিক এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব ছিল না এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে যাঁরা আমাদের সমর্থন করেছেন তাঁদের প্রতি আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ

ভারত বাংলাদেশ একসাথে মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জনের গৌরবের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারী এটি আধুনিক ইতিহাসে একটি অনন্য উদাহরণ, যেখানে দুই দেশের সেনাবাহিনী সমন্বিত ভাবে লড়াই করেছে এবং একই শত্রুকে পরাজিত করেছে আমাদের শহীদদের রক্ত এবং আত্মদানের মাধ্যমে এই শাশ্বত বন্ধন চিরস্থায়ী হয়েছে এই বন্ধন সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও আমাদের দুই দেশকে একত্রিত করবে

এই অনুষ্ঠানে, আমি স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী উভয় দেশের শহীদদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি

আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান এবং আত্মত্যাগের স্বীকৃতি দিই এবং সম্মান করি আপনারা আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং আমরা আপনাদের 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বজায় রাখার' ভূমিকার প্রশংসা করি

আজ যাঁরা বৃত্তি পাচ্ছেন, আপনারা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে জন্মগ্রহণ করা এবং তাদের গৌরবের উত্তরাধিকার বহন করার জন্য গর্ব হওয়া উচিত টি একটি অনন্য গৌরব যা তাদের ঐতিহ্য এবং চেতনাকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব বহন করে আমি নিশ্চিত যে, আপনারা সবাই উভয় দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে প্রতীয়মান হবেন

 

!! ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চিরজীবী হোক !!

!! জয় বাংলা, জয় ভারত!!