Announcements বাংলা চলচ্চিত্র

বাংলা চলচ্চিত্র

সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক এবং মৃণাল সেন-এর মতো প্রসিদ্ধ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাজ বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশ্ববিখ্যাত করেছে। এই অঞ্চলে দুটি বিশাল চলচ্চিত্র নির্মাণ কেন্দ্র রয়েছে-এর একটি হচ্ছে কলকাতায় এবং অন্যটি ঢাকায়। পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রের বাজার সমগ্র ভারত জুড়ে বিশেষ করে ত্রিপুরা এবং আসামের মতো রাজ্যগুলিতে বিপুল দর্শক হৃদয় জয়করেছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ ও প্রবাসী বাঙালি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে।

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে ১৮৯০ সালে যখন কোলকাতা থিয়েটারে প্রথমবারের মতো বায়োস্কোপ প্রদর্শিত হয়েছিল। পরবর্তী এক দশকের মধ্যেমুন্সিগঞ্জের হীরালাল সেন, যিনি ভিক্টোরিয়ান যুগের চলচ্চিত্র জগতের প্রবল পরাক্রান্ত ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত, রয়েল বায়োস্কোপ কোম্পানি স্থাপনের মধ্য দিয়ে এই শিল্পের বীজ বপনকরেন। তিনি কোলকাতায় স্টার থিয়েটার, মিনার্ভা থিয়েটার এবং ক্ল্যাসিক থিয়েটারে মঞ্চায়িত অসংখ্য জনপ্রিয় মঞ্চনাটক থেকে বিভিন্ন ছবি এবং ভারতে বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্র নির্মাণকরেছেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে সেন-এর অনেক পরে ১৯১৮ সালে ধীরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি প্রথম বাঙালি মালিকানাধীন চলচ্চিত্র নির্মাণ কোম্পানি ইন্দো ব্রিটিশ ফিল্ম কোম্পানি(আইবিএফসি) প্রতিষ্ঠা করেন। আইবিএফসি থেকে ১৯২১ সালে প্রথম নির্মিত হয় বিলাত ফেরত। অন্যদিকে বাংলা ভাষায় প্রথম চলচ্চিত্র ‘বিল্বমঙ্গল’ নির্মাণ করে মাদাম থিয়েটার কোম্পানি(এমটিসি), যা ১৯১৯ সালের নভেম্বরে মুক্তি পায়। এমটিসি ১৯৩১ সালে অমর চৌধুরীর পরিচালনায় প্রথম বাংলা টকি জামাই ষষ্ঠি নির্মাণ করে। 

কলকাতার চলচ্চিত্র শিল্প টালিগঞ্জকে কেন্দ্র করে গড়ে  উঠেছে। অতীতে এই শিল্প ভারতীয় চলচিচত্রে বৃহৎ একটি অংশ জুড়ে ছিল এবং একাডেমী সম্মাননা পুরুস্কার বিজয়ী সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক এবং মৃণাল সেন এর মতো পরিচালদের উপহার দিয়েছে। বাঙলা চলচ্চিত্র শিল্পে অন্যান্য খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে রয়েছেন প্রমথেশ বড়ুয়া, বিমল রায়, তপন সিনহা, তরুণ মজুমদার, বুদ্ধদেব দাসগুপ্ত, অপর্ণা সেন, গৌতম ঘোষ এবং ঋতুপর্ণ ঘোষ। নাগরিক (১৯৫২), অপু ট্রিলজি (১৯৫৫-১৯৫৯), জলসাঘর(১৯৫৮), অযান্ত্রিক (১৯৫৮), নীল আকাশের নিচে (১৯৫৯), দেবী (১৯৬০), মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০) এবং কোলকাতা ট্রিলজি (১৯৭১-১৯৭৬)- এই বিখ্যাত চলচ্চিত্র গুলো নির্মাণ করেছে টালিগঞ্জ। অপু ট্রিলজি সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র গুলোর মধ্যে স্থান পেয়েছে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প ঢাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক কাহিনী চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ তৈরি হয়েছিল। এটি আব্দুল জব্বার খানের প্রযোজনায় ১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট মুক্তি পায়। ১৯৬০ সালের শেষার্ধে প্রতি বছর বিশ থেকে পয়ত্রিশটি চলচ্চিত্র নির্মিত হত। এই নির্মাণের পরিমাণ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরেও চলতে থাকে;  উদাহরণ স্বরূপ  ১৯৭৯ সালে ৫১ টি চলচ্চিত্র মুক্তি পায় এবং নব্বই এর দশকে প্রতি বছর প্রায় ৯০ টি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়।

২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশ শ্রেষ্ঠ বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্রের জন্য একাডেমীক পুরস্কার এর মনোনয়ন পেশ করতে শুরু করে। তারেক মাসুদের মাটির ময়না (দি ক্লে বার্ড ) হচ্ছে অবেদন কৃত প্রথম চলচ্চিত্র এবং এটি কান, এডিনবার্গ, পাম স্প্রিং, মন্ট্রিল, মরক্কো এবং কায়রো চলচ্চিত্র উৎসব সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতে নেয় । আরেকজন আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত বাংলাদেশী চলচ্চিত্র নির্মাতা হলেন মোরশেদুল ইসলাম, যিনি ম্যানহেইম-হাইডেলবার্গ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রধান পুরস্কার গুলো জিতে নেন। বাংলাদেশের  বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে তারেক মাসুদ, তানভীর মোকাম্মেল, নির্মল সেন, ইশতিয়াক জিকো, হুমায়ূন আহমেদ, জহির রায়হান অন্যতম, এরা সকলেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিপুল জনপ্রিয় এবং সেখানে তাদের অসংখ্য ভক্ত রয়েছে। 

 

****