সিলেট শহরের টেকসই উন্নয়নের লক্ষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে হাই কমিশনারের বক্তব্য (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭) বিবৃতি ও বক্তৃতা

সিলেট শহরের টেকসই উন্নয়নের লক্ষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে হাই কমিশনারের বক্তব্য (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)

ভারতীয় হাই কমিশন

ঢাকা

সিলেট শহরের টেকসই উন্নয়নের লক্ষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে হাই কমিশনারের বক্তব্য

(সিলেট, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)

 

মাননীয় অর্থমন্ত্রী, জনাব আবুল মাল আব্দুল মুহিত

জনাব শাহ মো: আমিনুল হক, অতিরিক্ত সচিব, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়

জনাব এনামুল হাবিব, সিইও, সিলেট সিটি কর্পোরেশন 

জনাব নূর আজিজুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী

জনাব আলী আকবর, নির্বাহী পরিচালক

চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাই কমিশনার, শ্রী সোমনাথ হালদার

এবং

সম্মানিত অতিথিবৃন্দ,

আজ আমি সিলেট শহরের টেকসই উন্নয়নের লক্ষে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাথে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে পেরে খুবই আনন্দিত ।

২.        আজকের এই সমঝোতা স্মারকটির স্বাক্ষর ২০১৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দুই দেশের সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের পরবর্তী অনুক্রমণ ।

৩.        সিলেটের পরিকল্পনার আওতায় ভারত সরকার একটি পাঁচতলা কিন্ডার গার্টেন ও উচ্চ বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ; একটি ছয়তলা পরিচ্ছন্নতাকর্মী কলোনী ভবন নির্মাণ এবং ধোপা দিঘিরপাড় এলাকার কিছু উন্নয়নমূলক কাজে অর্থনৈতিক সহায়তা দেবে যার মোট ব্যয় ২৪.২৮ কোটি টাকা।

৪.         সিলেট একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিকভাবে রোমাঞ্চকর নগরী। এটি ভারতের তদানীন্তন আসাম প্রদেশের অংশ ছিল। মুক্তিযুদ্ধে এর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ । অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তি এই শহরে জন্মেছেন, এদের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, মন্ত্রী এবং কূটনীতিকবর্গ । এটি বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের একটি কেন্দ্রস্থল । আমরা এই নগরীর সঙ্গে বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে, সম্পৃক্ত হতে পেরে গর্ব বোধ করছি ।

৫.        এখানে উপস্থিত অনেকেই জানেন যে এই সমঝোতা স্মারকের আওতায় ভারত একটি কিন্ডার গার্টেন ও উচ্চ বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে । সিলেট শহরের টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় অন্যতম একটি হল ছয়তলা পরিচ্ছন্নতাকর্মী কলোনী ভবন নির্মাণ । আমরা খুবই আনন্দিত যে বাংলাদেশ সরকার শহর পরিচ্ছন্নতা কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করছে । আমাদের চারপাশের পরিবেশকে বসবাসের উপযোগী রাখতে যারা কাজ করেন তাদের প্রতি আমাদের সকলের খেয়াল রাখা উচিত । ভারত সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি ২ অক্টবর ২০১৪ থেকে স্বচ্ছ ভারত মিশন হাতে নিয়েছেন। এটি ভারতবাসীর মাঝে বিশেষ করে গ্রাম ও প্রত্যন্ত এলাকার মানুষদের মাঝে তাদের চারপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে একটি সাধারণ গণসচেতনতার সৃষ্টি করেছে । এই মিশনের আওতায় ভারত সরকার বিভিন্ন রকম স্কিম চালু করেছে । এর বিস্তারিত জানা যাবে স্বচ্ছ ভারত মিশনের ওয়েবসাইটে –www.sbm.gov.in  । আমি নিশ্চিত যে এখানে এরকম স্কিম চালু করা হলে বাংলাদেশ এবং এর জনগণও উপকৃত হবে ।

৬.        ভারতের আর্থিক সহায়তায় সিলেটের ধোপা দিঘিরপাড় এলাকার উন্নয়ন আরেকটি পরিকল্পনা, যেটির অবস্থা খুবই নাজুক । এই পরিকল্পনার আওতায় অনেকগুলো উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে যাতে স্থানটি স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি বিনোদনের জায়গা হতে পারে ।

৭.         ভারত সরকার ২১.৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী শহরের টেকসই উন্নয়নের জন্য একই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে । গত মাসের ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে এই বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় । ভারত সরকার খুলনা শহরের টেকসই উন্নয়নের জন্যও ১২.০৮ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে । খুলনা প্রজেক্টের জন্য অতিশীঘ্র একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে ।

৮.        যখন এই পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন সম্পন্ন এবং এর সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিগণ উপকৃত হলে, আমি অত্যন্ত আনন্দিত হবো । আমরা এই পরিকল্পনাগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হতে পেরে আনন্দিত । যখন আমি এসব কথা বলি, আমার মনে পড়ে যায় সেই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কথা, যে যুদ্ধে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই এই দেশের স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছে । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর অবদান দুই দেশের মানুষের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকবে । বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি নতুন মাত্রা পাচ্ছে । আমরা আশা করি এই সু-সম্পর্ক সব সময়ের জন্য অক্ষুন্ন থাকবে ।

৯.        বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে সিলেটের প্রতিনিধিত্বকারী মাননীয় অর্থমন্ত্রীর মূল্যবান উপস্থিতির জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি প্রবীণ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবীদ এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একজন প্রতিনিধি । আমরা ভবিষ্যতেও সবসময় তার উপদেশ কামনা করছি । আমি এই সুযোগে ইআরডি-কে তাদের সার্বিক প্রচেষ্টার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, যার জন্য আজকের এই সমঝোতা স্মারক সাক্ষর সম্ভব হয়েছে । এখন এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর আমাদের উচিত সঠিক সময় মতো পরিকল্পনার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

১০.      এই বলে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি এবং উপস্থিত সকলের শুভ কামনা করছি ।
           ধন্যবাদ ।

****